পলাশবাড়ীতে হাসপাতালে ভর্তি না দেখিয়ে নার্সের বাসায় ভুল চিকিৎসা করায় মা ও শিশুর করুন মৃত্যু!
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে ভর্তি না দেখিয়ে নার্সের বাসায় সন্তান প্রসবের জন্য নেয়া স্বর্না বেগম (২৫) নামে এক প্রসুতি ও তার নবজাতক সন্তানের করুন মৃত্যু হয়েছে।
অভিযুক্ত নার্সের নাম আমেনা বেগম ঝর্না সে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
নিহত প্রসুতীর নাম স্বর্না বেগম (২৫)। সে গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউপির ফলিমারী গ্রামের সুজন মিয়ার কন্যা।তার স্বামীর বাড়ী বাদিয়াখালী ইউনিয়নের উদাখালী গ্রামে।
২ এপ্রিল সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানায় ২৩ মার্চ সকালে স্বর্না প্রসব বেদনায় ছটফট করলে তাকে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।
সেখানে কর্তব্যরত নার্স আমেনা বেগম ঝর্না প্রাথমিক ভাবে তাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি না করে হাসপাতালের ২য় তলায় নিয়ে যায়।এরপর ওই প্রসুতির অবস্থা দেখে তার শরীরে বেশ কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করে।পরে ২ ঘন্টা ভর্তি ছাড়াই রোগীকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে রাখে।
দুপুর ১২ টার দিকে প্রসুতির আত্নীয়কে নার্স জানায় রোগীর ডেলিভারি হতে দেরী হবে,হাসপাতালে ডাক্তার নেই! আপনারা রোগী নিয়ে বাসায় চলে যান।নার্সের এমন কথা শুনে রোগীরা হতাশায় ভেঙ্গে পরেন।
এক পর্যায়ে নার্স আমেনা বেগম ঝর্না জানায় রোগীকে নার্সের বাসায় নিয়ে চিকিৎসা দিলে রাত ১২ টার মধ্যেই সন্তান ভুমিষ্ট হবে। নার্সের কথা মত রোগীকে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়।
রাত ৩ টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে সন্তান ভুমিষ্ট না হওয়ায় তিনি রোগীর নিকট আত্নীয়দের ডাকতে বলেন।এবং ভোর ৬ টার দিকে প্রসুতির গোপনাঙ্গ কেটে মৃত সন্তান বের করেন নার্স আমেনা বেগম ঝর্না।
এসময় নবজাতকের বাবা খোকন মিয়ার আত্ন চিৎকারে ওই এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
কিছুক্ষণ পর নার্স জানায় সন্তানের পর এবার মায়ের অবস্থা আশংকা জনক!যে কোন মুহুর্তে মৃত্যু হতে পারে। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে।নার্সের মুখে এমন কথা শুনে রোগীর স্বামীসহ আত্নীয় স্বজনের মাথায় বাজ পরে।
তারা হাসপাতালের সামনে বে সরকারি এম্বুলেন্স ড্রাইভার রিপনকে ডেকে দ্রুত গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।কিন্তু দুঃখ জনক হলে ও সত্য এতক্ষণে ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে।ফলে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এম্বুলেন্স ড্রাইভার রিপন জানান, হাসপাতালে নেয়ার পথেই ওই প্রসুতির
মৃত্যু হয়।
সুইগ্রামের বাসিন্দা রিক্সা চালক শান্ত বলেন আমেনা বেগম ঝর্নার বাড়ীতে প্রতিনিয়ত ঘটে এমন মৃত্যুর ঘটনা।হাসপাতাল থেকে দালাল দিয়ে রোগী বাসায় এনে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার টাকা।
হাসপাতালে সামনে মেডিসিন ব্যবসায়ী হাবিব জানায় সরকারি হাসপাতালে আগত রোগীদের ফুসলিয়ে বাসায় নিয়ে ডেলিভারি করার কারনে কত প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে তার সংখ্যা বলা মুশকিল।তবে এর একটা বিহীত হওয়া দরকার।
অভিযুক্ত নার্স আমেনা বেগম ঝর্না বলেন, রোগী আমার আত্নীয় বিধায় বাসায় এনেছিলাম।সন্তানের মৃত্য আমার বাসায় হয়েছে।শুনেছি প্রসুতির স্ত্রী সদর হাসপাতালে মারা গেছে।
পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রাহাত আল রাজীব বলেন জনস্বার্থে হলে ও লিখিত অভিযোগ পেলে ওই নার্সের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিনিয়র স্টাফ নার্স আমেনা বেগম বিভিন্ন মহলে দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন বলে জানাযায়।
তবে নার্স আমেনা বেগম ওরফে ঝর্নার বদলী, শাস্তি ও লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের দাবিতে আগামী মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় এক মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে এলাকায় সচেতন মহলসহ স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা।