যশোর অভয়নগরের এগারো শিবমন্দির আজও কালের সাক্ষী
ইমাদুল ইসলাম, যশোর জেলা : প্রতিনিধি
যশোর জেলাকে আলোকিত করে রেখেছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন। এর মধ্যে অভয়নগরের ১১ শিব মন্দির উল্লেখযোগ্য, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনও। শুধু তাই নয়, এই ১১ শিব মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভয়নগর উপজেলার নামকরণের ইতিহাস।
এখানে জড়িয়ে আছে এক দুঃখী রাজকুমারীর দুঃখগাথা। ওই শিব মন্দিরগুলোর সামনে দাঁড়ালে যেন আজও দর্শকদের ছুঁয়ে যায় সেই রাজকুমারীর কষ্টের ভারী নিশ্বাস। আজও সেখানকার সবুজ সিক্ত হয় রাজকুমারীর চোখের জলে।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ৩০০ বছর আগের ঘটনা। আঠারো শতকের গোড়ার দিককার কথা। মুঘল আক্রমণে পরাজিত ও বন্দি হয়েছেন যশোরের তৎকালীন প্রতাপশালী রাজা প্রতাপাদিত্য। জীবন বাঁচাতে রাজার বংশধরেরা যশোরের নানা দিকে ছড়িয়ে পড়েছেন। রাজার এক বংশধর নীলকণ্ঠ রায় আশ্রয় নিলেন ভৈরব নদের তীরবর্তী অঞ্চলে। এরই মধ্যে রাজা নীলকণ্ঠের ঘরে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে রাজকন্যা।তার নাম রাখা হয় অভয়া। ভৈরব নদের আলো-হাওয়ায় বড় হয়ে ওঠে অভয়া। বিয়ের ক্ষণ এলো রাজকুমারীর। বিয়ে ঠিক হলো পার্শ্ববর্তী চিত্রা নদীর তীরঘেঁষা অঞ্চল নড়াইলের জমিদার বংশের নীলাম্বর রায়ের সঙ্গে।
তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিয়ের কিছুদিন পরেই মারা যান নীলাম্বর রায়। বিধবা হলেন অভয়া দেবী। ছোটবেলা থেকেই অভয়া ছিলেন ধার্মিক। তিনি ছিলেন দেবতা শিবের উপাসক। বিধবা হওয়ার পর অভয়া দেবী চোখের জল মুছে পূজা-অর্চনায় মন দিলেন। পিতার কাছে শিব মন্দির তৈরি করে দেওয়ার আবদার করলেন। তার অনুরোধে ১৭৪৫ থেকে ১৭৬৪ সালের মধ্যে এই মন্দির গুলো তৈরি করা হয়। পিতা নিঃসঙ্গ কন্যার আবদার পূরণে বিলম্ব করলেন না।তাৎক্ষনিক ১১টি শিব মন্দির তৈরি করে দিলেন ভৈরব নদের তীরে। এলাকার নাম রাখলেন অভয়ানগর। কালক্রমে যা অভয়নগর হিসেবেই পরিচিতি পায়। কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে ভৈরব নদের তীরে কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে সেই এগারো শিব মন্দিরগুলো। একই স্থানে এতগুলো শিব মন্দির বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। দক্ষিণ দিকে এই মন্দির গুলোর প্রধান প্রবেশপথ। একটা সময় এগারটি মন্দিরের মধ্যে আলাদা ১১ টি শিবলিঙ্গ ছিল যা চুরি হয়ে গেছে। সেই সময়ে পোড়ামাটির নানা কারুকাজ যে কোন পর্যটককে আকৃষ্ট করে সহজেই। যেন পোড়ামাটির তীব্র গন্ধ এখনও নাকে এসে লাগে আর এর শৈল্পিক নকশা বিমোহিত করে সবাইকে।
কথিত আছে এখনো নাকি বিশেষ কোন তিথিতে বা কোন কোন সময় রাত গভীর হলে এক নারী কন্ঠের কান্না শোনা যায়। যদিও তা নিজে কানে শুনিনি তাই বিশ্বাস করেও উঠতে পারিনি। রাতে যাবার সুযোগ খুঁজতে হবে৷
থেকে অভয়নগর উপজেলায় যখন নামি তখন দুপুর শেষের দিকে৷ সেখান থেকে ভ্যানে করে রাজঘাটে যাবার সময় মেইন রোড থেকে নেমে কাঁচাপাকা রোড ধরে জুটমিলের পাশ দিয়ে ভৈরব নদ পর্যন্ত রাস্তাটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে হতে পৌছে যাই রাজঘাটে৷ কি দারুণ ভৈরব নদ! এর উত্তর তীরে এগারো শিবমন্দির। খেয়া পার হয়ে ওপার যেয়ে হাতের বামে একটু হাটলেই চোখে পরে এগারো শিবমন্দিরের চূড়া। একদম চুপচাপ কোলাহল মুক্ত জায়গায় কালের সাক্ষী হয়ে এখনো মন্দিরগুলো দাঁড়িয়ে আছে।,