শত শত ব্যবসায়ী ও গ্রাহকের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং জনমত উপেক্ষা করে জনতা ব্যাংক মীরগঞ্জ বাজার শাখা, গাইবান্ধা নাম হলেও ওই বাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে সুন্দরগঞ্জ নামক স্থানে তা স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যাংকের গ্রাহক এবং স্থানীয়রা । আর শাখাটি স্থানান্তরিত হলে চরম ভোগান্তিতে পড়বে ব্যাংকের শত শত সেবা প্রত্যাশী এবং বাড়বে যাতায়াত ব্যয় ও নষ্ট হবে সময় । গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ঐতিহাসিক মীরগঞ্জ হাটকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে হাটের পাশেই অবস্থিত জনতা ব্যাংক লিমিটেড শাখার স্থান পরিবর্তনের নামে সরিয়ে নেয়ার জন্য একটি অসাধুচক্রের অপচেষ্টার প্রতিবাদে মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে । বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জনতা ব্যাংকের সামনে মীরগঞ্জ বাজার দোকান মালিক ও স্থানীয়দের আয়োজনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় । এসময় বক্তব্য রাখেন সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ সরকার রেজা ডাবলু, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব মাসুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দহবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল আলম রেজা, প্যানেল মেয়র ছামিউল ইসলাম, পৌর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ সুলতান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহজাহান মিঞা, বাজার দোকান মালিক সমিতির সদস্য ননী গোপাল সরকার নিমাই, জীবন সাহা, সুজন সরকার ও লিটন মিয়া সহ আরো অনেকে । জানা গেছে, উপজেলার ঐতিহাসিকভাবেই মীরগঞ্জ হাটটি প্রসিদ্ধ । প্রতি বুধ ও শনিবার হাট বসলেও সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতেও বসে বাজার । পৌর শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এ বাজারটিতে অতীত থেকেই রয়েছে বড় রড় রড, সিমেন্ট, ঢেউটিন, হার্ডওয়ার, সিরামিক্স, কাপড়, সার, কীটনাশক, ওষুধ ও মনোহারি পণ্যের ডিলার এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী । সেজন্য প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের সমাগমও ঘটে বাজারটিতে । পৌর শহরের সুন্দরগঞ্জ বাজার এলাকায় কয়েকটি ব্যাংক থাকলেও শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত বাজারটিতে গ্রামীণ ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ছাড়া ব্যবসায়ীদের দৈনিক ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার মতো ছিল না কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক । একদিকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রটিতে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, অন্যদিকে মীরগঞ্জ বাজার হতে ১৫ কিলোমিটার দূরের জনতা ব্যাংক, শোভাগঞ্জ শাখাটি ক্রমাগতভাবে লোকসান করে আসছিল । এ অবস্থায় ব্যাংকটিকে লাভে নিয়ে যাওয়া এবং জনস্বার্থ বিবেচনা করেই ২০০১সালে জনতা ব্যাংক মীরগঞ্জ বাজার শাখা নাম ধারণপূর্বক পৌর শহরের মীরগঞ্জ বাজারে স্থানান্তর করে শুরু হয় ব্যাংকিং কার্যক্রম । বিভিন্ন নামি- দামি কোম্পানি, ব্র্যাক, আশা, এসকেএস, ইএসডিও, টিএমএসএস সহ বিভিন্ন এনজিও, কাঁচামাল রপ্তানীকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় গ্রাহকেরা দৈনিক কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেন । সূত্র বলছে, বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে লাভও করে আসছে ব্যাংকটি । গত ২০২২ সালে লাভ করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা । কিন্তু শুধুমাত্র ব্যাংকে ওঠার( ২য় তলা) সিঁড়িটি একটু উঁচু হওয়ার কারণ দেখিয়েই বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ার হোসেন সুন্দরগঞ্জ নামক ভিন্ন একটি স্থানে তা স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন বলে জানা যায় । জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা ব্যাংকটি যাতে বাসা পরিবর্তন করে হলেও সুন্দরগঞ্জে স্থানান্তর করা না হয়, সেজন্য নতুন ভবনও করে দিতে চেয়েছিলেন ননী গোপাল সরকার নিমাই নামে এক ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী । তিনি বলেন, ‘ ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন ব্যাংকে ওঠানামা সিঁড়ির সমস্যার কথা বলেছিলেন । আমি ভবন করে দিতে চেয়েছি । আমানতের কথা বলেছিলেন । তাই অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোটি টাকার ওপর আমানতও জমা দিয়েছি । আমাদের ব্যবসায়ীদের দাবি- বাসা পরিবর্তন করুক সমস্যা নেই । কিন্তু ব্যাংক শাখা যেন মীরগঞ্জ বাজার থেকে সুন্দরগঞ্জে না যায় । কারণ সুন্দরগঞ্জে গেলে হাজার হাজার গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়বে । ক্ষতিগ্রস্থ হবেন গ্রাহকরা । ’ এদিকে, গুরুত্ব বিবেচনা করে ব্যাংকটি যাতে মীরগঞ্জ বাজার থেকে স্থানান্তর করে সুন্দরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া না হয় সেজন্য স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী গত ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া- র নির্বাহী পরিচালক বরাবর একটি চিঠিও দিয়েছেন । ব্যাংক শাখা স্থানান্তরের গুঞ্জনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি । এরিয়া অফিস, গাইবান্ধার এজিএমমো.সানাউল হকের সাথে কথা হলে তিনি গাড়িতে রয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন । পরে আবার ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেন নি ।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ আতাউর রহমান মুকুল
WhatsApp: +880 1710-489904, E-mail: [email protected]