জেলা নীলফামারী জেলা র ডিমলা উপজেলায় এক ইউনিয়ন পরিষদের( ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সামছুল হকের বিরুদ্ধে সচিবের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন ও কাজ না করে তিন বছর আগের দুইটি প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে । এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের( দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন মীর মিকছন নামে এক ব্যক্তি ।
এছাড়াও স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. মাহাবুব রহমান । জানা যায়, ডিমলা উপজেলার ৫- নং গয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল হক তার ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্যকে প্রকল্পের সভাপতি বানিয়ে কাজ না করে তিন বছর আগের দুইটি প্রকল্প পাঁচ লক্ষ চুয়ান্ন হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন । এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের যেকোন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত উত্তোলনে চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের স্বাক্ষরের প্রয়োজন থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক তা না করে তিন বছর আগের দুইটি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেন । অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল হক ২২- ২৩ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের প্রথম কিস্তির বরাদ্দকৃত দুইটি প্রকল্পের জন্য ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার চারশত টাকা বরাদ্দ পান ।
এরপর চেয়ারম্যান তার ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য সফিকুল ইসলাম ও ৪নং ওয়ার্ড সদস্য সাহাবুল মিয়ার নাম প্রকল্পে কমিটির সভাপতি দেখিয়ে পুরোনো তিন বছর আগের দুইটি প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে সমুদয় টাকা আত্মসাত করেন । এছাড়া উপজেলা পরিষদ হতে প্রাপ্ত ভূমি রেজিস্ট্রেরীর এক শতাংশের এক লক্ষ বিশ হাজার টাকাসহ ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাত করেন তিনি । এ বিষয়ে ইউপি সচিব মাহবুল আলম নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে । অভিযোগে বলা হয়, ভূয়া দুইটি প্রকল্পর মাঠে কোন অস্তিত্ব নেই ।
এরপরেও চেয়ারম্যান সামছুল হক গত ঈদ উল ফিতরের আগে ইউপি সচিবের স্বাক্ষর জাল করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ডিমলা শাখায় টাকা উত্তোলন করেছেন । এছাড়াও চেয়ারম্যান সামছুল হক ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ভাতা, মাতৃভাতা, ভিজিএফের চাউল বিক্রিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কাউয়াধনী পাড়া এলাকার দক্ষিণ গয়াবাড়ী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মৃত চয়নুদ্দিনের বাড়ীর সামনের রাস্তায় পুকুরের প্লাসাইডিং নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয় । কিন্তু সরেজমিনে ওই প্রকল্পের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি । একই ঘটনা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ফুটানিরহাট এলাকার হামিদুলের বাড়ির নিকট রাস্তায় ইউড্রেন নির্মাণ নিয়েও । মৃত চয়নুদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী দৈনিক আলোকিত পত্রিকা ও দৈনিক কালবেলাকে বলেন, আমার বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে রাস্তায় কোন প্লাসাইডিং নির্মাণ করা হয়নি । তবে রাস্তা ধসে গেলে এখানে কয়েক টলি মাটি- বালু দিয়েছিলো । এর চেয়ে বেশি তার জানা নেই । গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. মাহাবুব আলম দৈনিক আলোকিত পত্রিকা ও দৈনিক কালবেলাকে বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের অনুমতি নিয়ে তিনদিনের চিল্লায় ছিলাম । তবুও অফিসের নানান কাজ করেছি । এ সময়ের মধ্যে উপজেলা পরিষদ হতে প্রাপ্ত ভূমি রেজিস্ট্রেরীর এক পার্সেন্টের ১ লক্ষ টাকা ও যে প্রকল্পের কোন অস্তিত্বই নেই সে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন । ইউনিয়ন পরিষদের কোন প্রকল্পের অর্থ উত্তোলনে চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের যৌথ স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় । সেক্ষেত্রে উক্ত অর্থ উত্তোলনে আমি কোন স্বাক্ষর করিনি । চেয়ারম্যান সামছুল হক আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করেছেন ।
এ ঘটনায় আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে । আমি আশাবাদী সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন হবে ও কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে । যাতে ভবিষ্যতে কেউ এরকম অসাদুপায়ে অবলম্বন করতে না পারে । দুদকে অভিযোগকারী মীর মিকছন দৈনিক আলোকিত পত্রিকা ও দৈনিক কালবেলাকে বলেন, হামিদুলের বাড়ীর সামনে ইউড্রেন কয়েক বছর আগের প্রকল্প । আর চয়নুদ্দিনের বাড়ীর সামনে তো কোন প্লাসাইডিং নির্মাণেই হয়নি । চলতি বাজেটে উক্ত প্রকল্প দেখিয়ে ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের টাকা সচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে চেয়ারম্যান উত্তোলন করেন । ওই প্রকল্পের কোন অস্তিত্বই নেই । তিনি আরও বলেন, ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ভাতা, মাতৃভাতা, ভিজিএফ এবং চাউল বিক্রিসহ নানা প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতে চেয়ারম্যান সম্পৃক্ত । আমি এলাকার উন্নয়ন চাই । প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. সাহাবুল আলম দৈনিক আলোকিত পত্রিকা যদি ও দৈনিক কালবেলাকে বলেন, প্রকল্প আছে ।
যখন অডিট আসবে তখন সরেজমিনে দেখাব । এরপর সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন তিনি । আরেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ।
এ বিষয়ে গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় আছেন বলে জানান ইউপি সচিব মাহাবুব আলম । পরে মুঠোফোনে চেয়ারম্যান সামছুল হককে একাধিক কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি । নীলফামারীর জেলা প্রশাসক( ডিসি) পঙ্কজ ঘোষ দৈনিক আলোকিত পত্রিকা ও দৈনিক কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি । তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । । ।