নারায়ণগঞ্জে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রো গত ১০ দিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিল নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১৫ জন রোগী। এর মধ্যে সপ্তাহ খানেক সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে চলে গেছে ১১ জন। বর্তমানে আরো ৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোনারগাঁ উপজেলা সদরের ১০ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সর্বত্র মিলেছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি। এ অবস্থায় উপজেলা সদরের সর্বত্র এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত, শিশুদেরকে নিয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন অভিভাবকরা। ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাস সংক্রমণ। এডিস মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে তখনই আক্রান্ত হয় যখন মশা একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় এবং তারপর ভাইরাস বহন করার সময় একটি অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়। এডিস মশার কামড়ে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি ইত্যাদি। এছাড়া অনেক সময় রোগটি মারাত্বক রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্ল্যাটলেট নিঃসরণ ঘটে। সংক্রমণটিকে মোটেই অবহেলা করার মত নয়, এটি গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে রোগীর মৃত্যু আশঙ্কা রয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রোর চিকিৎসক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানুষ যদি একটু সচেতন হয় এবং এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করে ফেলে তবে দ্রুতই ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মশার লার্ভা সাধারণত জমে থাকা স্থায়ী পানিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাসার বারান্দায় রাখা গাছের টব, প্লাস্টিকের ব্যাগ, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ারে পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রোর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোশারফ হোসেন জানান, ডেঙ্গুর লক্ষণে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আগে সবাই বলতো এডিস মশা দিনে দংশন করে। এটা ঠিক নয়। এই মশা এখন দিন-রাতে সব সময়ই দংশন করে। তাই বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি মশা যেন কামড়াতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের হাসপাতালে নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য আলাদা ভাবে ডেঙ্গু কর্ণার প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখনো পর্যন্ত কোন রোগী মারা যায়নি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের নিরলস ভাবে সেবা দিতে আমাদের হাসপাতালের ডাক্তারেরা প্রস্তুত রয়েছে।