বিরামপুরে ডাকঘরে চলছে মুদিদোকানের কেনাবেচা
বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত পুরনো ডাকঘরে চলছে মুদিদোকানের কেনাবেচা। আজ (৬ সেপ্টেম্বর-২৩) উক্ত বিষয়ে সরজমিনে জানা যায়,বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়ন পরিষদের পুরোনো ভবনের একটি ছোট ঘরে ছিল সাব-পোস্ট অফিস। উক্ত ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় সেখান থেকে ডাকঘরের কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া হয়। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ওই ভবনের পাশে নিজ মুদিদোকানে ডাকঘরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তমিজ উদ্দিন। তমিজ উদ্দিন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া সাব-পোস্টমাস্টার (ইডিএ)দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উল্লেখ্য,২০০০ সালে কাটলা ইউনিয়নের সাব-পোস্ট অফিসে এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট (ইডিএ) হিসেবে নিয়োগ পান তমিজ উদ্দিন। ডাক বিভাগ থেকে তিনি প্রতিমাসে ৪ হাজার ৪৬০ টাকা হারে ভাতা পেয়ে থাকেন। এই ভাতা দিয়ে তমিজ উদ্দিনের কোনোমতে ডাকঘরটির কার্যক্রম টিকিয়ে রাখেন।
উক্ত তমিজ উদ্দিনের সাথে রয়েছেন এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল ডেলিভারি এজেন্ট (ইডিডিএ) ফরিদ হোসেন। স্থানীয় ভাবে তাঁকে ‘ডাকপিয়ন’বলা হয়। তিনিও মাসে ৪ হাজার ৩৫৪ টাকা ভাতা পান। আর একজন আছেন এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল মেইল ক্যারিয়ার (ইডিএমসি) হামিদুল ইসলাম। স্থানীয় ভাবে তাঁকে ‘রানার’ বলা হয়ে থাকে। তিনি প্রতি মাসে ৪ হাজার ১৭৭ টাকা করে ভাতা পান। উক্ত কাটলা সাব-পোস্ট অফিসের উত্তরের দেয়ালঘেঁষা জায়গায় রয়েছে একটি কবরস্থান। দরজার সামনে পুরোনো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের প্রবেশ পথ। সামনেই বাজারের সাধারণ মানুষের জন্য রয়েছে জনস্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া একটি নলকূপ। উক্ত নলকূপের সামনে প্রতিদিন থাকে ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কাজে আসা ব্যক্তিদের পাঁচ থেকে ছয়টি মোটরসাইকেল। সব মিলিয়ে সাব-পোস্ট অফিসটি এখন প্রায় অচলের বেহাল চিত্র ফুটে উঠেছে। ডাকঘরের কাজ সারতে স্থানীয় জনসাধারণ কে যেতে হয় তুমিজ উদ্দিনের মুদিদোকানে। এ বিষয়ে তমিজ উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি ২৩ বছর যাবত কাটলা সাব-পোস্ট অফিসে চাকুরি করে আসছি। প্রায় ১২ বছর ধরে পোস্ট অফিসের ছাদের নিচের পলেস্তারা একটু একটু করে খসে পড়ছে। কখনো মাথায় আবার কখনো টেবিলের ওপরে পড়ে যায়। উল্লেখ্য,সরকার থেকে নতুন ভবন করতে হলে পোস্ট অফিসের নামে তিন শতক জমি থাকতে হয়। এ বিষয়ে দুজন ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছিল,কোন কাজ হয় নাই। বাজারের মধ্যে বা আশপাশে তিন শতক জমি দান করার মতো ব্যক্তি পাওয়াও অনেক মুসকিল। এ কারণে পোস্ট অফিসের নতুন ভবনের বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব হয়নি। পাঁচ বছর আগে ডাক বিভাগের পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাটলা সাব-পোস্ট অফিসে একটি করে ল্যাপটপ,স্ক্যানার ও ফটো প্রিন্টার দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল না থাকায় ও জরাজীর্ণ পোস্ট অফিসের কক্ষে রাখা নিরাপদ না হওয়ায় পোস্ট মাস্টার তমিজ উদ্দিন সেগুলো এখন তাঁর বাড়িতে রেখেছেন বলে জানা যায়। এ সম্পর্কে তমিজ উদ্দিন আরও বলেন, যন্ত্রগুলোর মধ্যে প্রিন্টার নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি দুটো যন্ত্র ব্যবহার না করার কারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনার পথে রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা পোস্টমাস্টার মোশাররফ হোসেনের নিকট মুঠোফোনে জানান,প্রতিটি পোস্ট অফিসে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পোস্ট ই-সেন্টার চালু করতে কয়েক বছর আগে ল্যাপটপ, ফটোকপি মেশিন,স্ক্যানার ও প্রিন্টার দেওয়া হয়েছিল। এসব পরিচালনার জন্য প্রকল্প থেকে একজন লোকও নিয়োগ করা হয়েছিল। আর এসব কার্যক্রম একজন পোস্ট অফিস পরিদর্শক (আইপিও) নিয়মিত তদারকি করে থাকেন। উক্ত বিষয়ে যাবতীয় তথ্যাদির রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান। এবিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণ নিকট জানতে চাইলে তারা জানান,অনেকদিন যাবত উক্ত ডাকঘরটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এমন অবস্থায় জরুরিভাবে তার তেমন কাজ পারেন না। এ বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ আতাউর রহমান মুকুল
WhatsApp: +880 1710-489904, E-mail: [email protected]