ঝালকাঠিতে গাছের চারা বিক্রির ধুম বনজের চেয়ে ফলদ চারার চাহিদা বেশি
ঝালকাঠিতে বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে এসে হাটে গাছের চারা বিক্রির ধুম চলছে। প্রতিবছরের মতো এবারও জমে উঠেছে চারা গাছের হাট। ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা এলাকায়, নলছিটি পুরনো ষ্টিমারঘাট এলাকায়, রাজাপুর উপজেলার বাঘড়ি বাজার, কাঁঠালিয়া উপজেলার আউড়া বাজার, বটতলা হাটে সব ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায়। বাড়ির আশেপাশে ও বিভিন্ন ফলগাছের চাষিরা তাদের বাগানে চারাগুলো রোপন করে থাকেন। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বেচাবিক্রি। চাহিদামত বিক্রি হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতা উভয় খুশি।
মূলত বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হওয়ায় ক্রেতারা তাদের পছন্দের গাছের চারাগুলো ক্রয় করে বাড়ির আশেপাশে ও বিভিন্ন ফলগাছের চাষীরা তাদের বাগানে চারাগুলো রোপণ করে থাকেন।
ঝালকাঠি জেলা শহরে সাপ্তাহিক হাট সোমবার ও বৃহস্পতিবার। শহরের পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকার বাসন্ডা ব্রীজের নীচে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছের চারা বিক্রির হাট বসে। পার্শ্ববর্তি স্বরূপকাঠি উপজেলার নার্সারী থেকে নৗপথে চারা সরবরাহ করা হয়। ক্রেতা, বিক্রেতা, পাইকার, চাষী, ব্যবসায়ীসহ বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে। চাহিদা মতো চারা কিনে নেন তারা। দামও আকার এবং মানভেদে রাখা হয়।
জেলার রাজাপুরে রাজাপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট বাগড়ি। সপ্তাহের প্রতি শনিবার বিকেল থেকে রবিবার বিকেলে পর্যন্ত এবং প্রতি বুধবার বিকেলে থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে পর্যন্ত সব ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায়। বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজাপুরের এ হাটে বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ ও সড়ক পথে নানান প্রজাতির গাছের চারা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।
আঙ্গারিয়া এলাকার ব্যবসায়ী বিক্রেতা হেল্লাল বেপারী বলেন, আমি সুপারি রেন্ডি চারা সহ সব ধরনের চারা ক্রেয় করে এই বাগরি বাজারে বিক্রি করি। এই ব্যবসা ৩০ বছর ধরে করতাছি৷
স্বরূপকাঠি থেকে আসা ব্যবসায়ী বিক্রেতা ফরহাদ এবং নৈকাঠি এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী বিক্রেতা চুন্নু হাওলাদার বলেন, পেয়ারা, মাল্টা, আমরা, লিচু, কাঁঠাল সহ ৮ রকমের ফলের চারা বিক্রি করি। এই বাজারে ৬৫ হাজার টাকার চারা আনছি শনিবার বিকেলে থেকে রবিবার বিকেলে পর্যন্ত ৯০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করছি। এই ব্যবসা ১৬ বছর ধরে করছি।
পারগোপালপুর থেকে আসা ক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, সুপারি চারা পিচ ২০টাকা করে ৩৫পিচ ও রেন্ডি চারা ১০টাকা করে ১০পিচ কিনছি এখানে ভালো চারা পাওয়া যায় তাই কিনতে আসছি।
জেলার নলছিটিতে সাপ্তাহে প্রতি রবিবার ও বুধবার উপজেলার সুগন্ধা নদীর পুরনো ষ্টিমারঘাট এলাকায় গাছের চারাগুলো বিক্রেতারা বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসেন। বাজারের দিন ক্রেতা ও বিক্রেতা মিলে কয়েকশত লোকের সমাগম হয়।
বিক্রেতা আলী আকবর বলেন, নলছিটিতে সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে আমি দুইদিনই গাছের চারা বিক্রি করতে এখানে আসি। প্রায় ত্রিশ প্রকারের চারা আমাদের কাছে রয়েছে। এর মধ্যে আম, আমড়া, কাঠাল, লেবু, পেয়ারা, মেহগনি, চাম্বল, ওষুধী, ফুল গাছের চারাসহ অন্যান্য সব ধরনের গাছের চারাও বিক্রি করি। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে চারা রোপন করলে চারা মরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে তাই ক্রেতারা মূলত এই সময়ে চারা ক্রয় করে রোপণ করেন। প্রতিটি গাছের চারা সর্বনিম্ন ৩০টাকা থেকে শুরু করে গাছের সাইজ অনুযায়ী তিনহাজার টাকায়ও বিক্রি হয়। এখানে কয়েক লাখ টাকার গাছের চারা বিক্রি করা হয়।
ক্রেতা মশিউর রহমান বলেন, নলছিটির নদীর কাছে হওয়ায় এই হাটে বিক্রেতারা নদী পথে চারাগুলো নিয়ে আসে যার কারণে চারাগুলো সতেজ থাকে। আমরাও ক্রয় করে নদী পথে নিয়ে যেতে পারি। নদী পথে নিয়ে গেলে ঝাকি কম হওয়ায় গাছের চারার গোড়ার মাটিগুলো শক্ত থাকে যার কারণে চারাগুলা রোপন করার পর মরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
বন বিভাগ ঝালকাঠি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় তাই এখানের হাটগুলোতে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে বনায়নের কোন বিকল্প নেই। আমাদের পক্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সদর উপজেলার শেখের হাট এলাকায় ১০ হাজার, নলছিটি উপজেলার হদুয়া এলাকায় ১০ হাজার, কাঁঠালিয়া বেরি বাঁধে ১৫ হাজার গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় বিনা মূল্যে ১৪ হাজারা মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা এলাকায়, নলছিটি পুরনো ষ্টিমারঘাট এলাকায়, রাজাপুর উপজেলার বাঘড়ি বাজার, কাঁঠালিয়া উপজেলার আউড়া বাজার, বটতলা হাটে সব ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায় তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি ফলজ ও ওষুধী গাছের চারা রোপন করা।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ আতাউর রহমান মুকুল
WhatsApp: +880 1710-489904, E-mail: [email protected]