নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দারুণ গোলে শুরুর দিকেই দলকে এগিয়ে নিলেন রাকিব হোসেন। প্রথমার্ধেই সমতা ফিরিয়ে লড়াই জমিয়ে তুলল মালদ্বীপ। পরে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের গোলে দারুণ জয় নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রিলিমিনারি রাউন্ডের বৈতরণী পেরুল বাংলাদেশ। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় মঙ্গলবার ২০২৬ বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ের প্রিলিমিনারি রাউন্ডের ফিরতি লেগে মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপে খেলবে বাংলাদেশ। ‘আই’ গ্রুপের অন্য দুই দল লেবানন ও ফিলিস্তিন। মালেতে দুই দলের প্রথম লেগের ম্যাচটি ১-১ সমতায় শেষ হয়েছিল। অ্যাওয়ে গোলের নিয়মে বদল আসায় ফিরতি লেগে জয়ের বিকল্প তাই ছিল না কোনো দলের সামনে। শুরুর দিকেই গোলমুখে তালগোল পাকান শাকিল, তবে বড় বিপদ হয়নি। হারানো বল ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন এই ডিফেন্ডার। একাদশ মিনিটে দারুণ গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন রাকিব। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম বাইলাইনের উপর থেকে ক্রস বাড়ান, নিখুঁত টোকায় জাল খুঁজে নেন রাকিব।
পঞ্চদশ মিনিটে জামালের ক্রসে ফাহিম শট নেওয়ার পর বল ড্রপ খেয়ে গোলরক্ষকের গ্লাভস ছুঁয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ব্যবধান দ্বিগুণের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয় বাংলাদেশের। ২৮তম মিনিটে আবারও সুযোগ নষ্টের হতাশায় পোড়ে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ হৃদয়ের পাস ক্লিয়ার করতে হেড করেন আহমেদ নুমান। কিন্তু বল চলে যায় তার পেছনে থাকা রাকিবের পায়ে। গোলরক্ষককে একা পেয়েও এই ফরোয়ার্ড তার গায়ে মেরে বসেন বিস্ময়করভাবে! ৩৬তম মিনিটে সমতায় ফেরে মালদ্বীপ। কর্নার বিপদমুক্ত করতে হেড করেছিলেন ফাহিম, কিন্তু পারেননি। বল তার মাথা ছুঁয়ে চলে যায় দূরের পোস্টে থাকা ইব্রাহিম আইসামের কাছে। হেডেই মিতুল মার্মাকে পরাস্ত করেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফের এগিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে ভাসে বাংলাদেশ। সাদউদ্দিনের জোরালো কোনাকুনি শট ফিস্ট করে ফেরান মালদ্বীপ গোলরক্ষক। বল সোহেল রানার পায়ে লেগে চলে যায় ফাহিমের কাছে। এবার আর সুযোগ হেলায় হারাননি এই ফরোয়ার্ড।
জাতীয় দলের হয়ে গোলের খাতা খুললেন ফাহিম। প্রতিপক্ষের ওপর চাপ ধরে রেখে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ৫৯তম মিনিটে সোহেল দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখায় ১০ জনের দলে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। তাতে কিছুটা হলেও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে বাংলাদেশকে। এর দুই মিনিট পর গোলমুখ থেকে ফাহিম টোকা দেওয়ার আগেই গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করেন। ৭১তম মিনিটে আইসামের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট আটকান মিতুল। ৮৯তম মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের হেড জাল খুঁজে পেলেও অফসাইডের কারণে গোল হয়নি। শেষ দিকে মরিয়া চেষ্টা করতে থাকে মালদ্বীপ। পাল্টা আক্রমণের ছক নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে পাল্টা আক্রমণেই রাকিবের পাস ধরে সুযোগ পান মজিবুর রহমান জনি। ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতিতে তাকে ফাউল করে আহনাফ রশিদ লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় মালদ্বীপও। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেই শুরুতে পিছিয়ে পড়ে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিংস অ্যারেনায় সেই সুখস্মৃতির পুনরাবৃত্তি করার পাশাপাশি শঙ্কার মেঘও সরিয়ে দিল রাকিব-মিতুলরা। ২০১৬ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভুটানের বিপক্ষে হেরে ১৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ফুটবলের আঙিনা থেকে নির্বাসনে চলে যায় বাংলাদেশ। সেই শঙ্কার মেঘ কিছুটা উঁকিও দিয়েছিল। তবে সব আশঙ্কা দূরে ঠেলে দ্বিতীয় রাউন্ডের মঞ্চে উঠল হাভিয়ের কাবরেরার দল।