শহীদুল ইসলাম শহীদ,সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সালিশী বৈঠক বসেছিল বাড়িতে। এ কথায়-সে কথায় বৈঠকে উপস্থিত মানুষের সামনে স্বামী মতিয়ারকে থাপ্পড় মেরেছিলেন তারাপুর ইউনিয়নের লাঠশালার চর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সুজন। সাথে ছিলেন ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল কামার।
পরে স্ত্রী পারভীনকেও বাবার বাড়িতে রেখে এসেছিলেন তারা। ফলে মনের দুঃখে ওই রাতেই জিগা গাছের মগডালে ফাঁশি দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন মতিয়ার রহমান (২২) নামের ওই যুবক। রোববার রাত ১টার দিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে জানা গেছে, পাকা বাড়ি করার জন্য বাড়ি-ঘর ভেঙে ছিলেন মতিয়ার। বাড়িস খোলামেলা হওয়ায় ২০০ গজ দূরেই শ্বশুর বাড়িতে রেখেছিলেন স্ত্রী পারভীনকে। রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পরে শ্বশুর বাড়িতে খোঁজ নিতে যান মতিয়ার। জানতে পারেন খালুর বাড়িতে গিয়েছেন পারভীন। রাত নয়টার দিকে খালু শ্বশুর (বাবলু মিয়ার) বাড়ি থেকে স্ত্রী পারভীজনের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসেন নিজ বাড়িতে। ভাগ্নীকে এভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া পছন্দ করেননি খালু শ্বশুর বাবলু মিয়া। রাত ১০টার দিকে ছেলে মাসুদকে সাথে নিয়ে বাবলু তেড়ে যান মতিয়ারের বাড়িতে। ঘরে ঢুকেই একটা ঘুষি মারেন মতিয়ারকে। আঘাত পেয়ে বিছানায় পড়ে যান মতিয়ার এমন অভিযোগ পরিবারের।
পরে মতিয়ারের বাবা হোসেন আলী স্থানীয়দের ডেকে নিয়ে সালিশে বসেন তারাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড লাটশালা গ্রামের মেম্বার সুজন মিয়া এবং একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল কামার। মতিয়ারের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে থাপ্পড় মারেন মেম্বার। পরে পারভীনকে বাবার বাড়িতে রেখে আসেন তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মতিয়ারের ছোট ভাই আতিকুর রহমান, প্রতিবেশি আজিজুল ইসলাম এবং আনোয়ারসহ পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের ভাষ্য স্ত্রীর পিছুপিছু গিয়েছিলেন মতিয়ার। পরে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন পরিবারের সদস্যরা। এক পর্যায়ে রাত একটার দিকে বাড়ির পশ্চিম পাশের একটি জিগা গাছের মগডালে গলায় রশি লাগানো অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখেন তাকে। তারা বলছেন, খালু শ্বশুর বাবলুর ঘুষি, মেম্বারের থাপ্পড় খাওয়ার লজ্জা এবং স্ত্রী পারভীনের ওপর অভিমান করে আত্নহত্যা করে থাকতে পারেন মতিয়ার। তবে মতিয়ারের মা মর্জিনা বেগমের অভিযোগ ছেলেকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছেন তারা।
এবিষয়ে স্ত্রী পারভীন বেগমের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, জোরপূর্বক তাদের মেয়েকে বাড়ী থেকে নিয়ে যাওয়ায় তারা থানায় অভিযোগ করতে আসেন এবং কিছু সময় পর পারভীন বেগম অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে সুন্দরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারে পারভীনের স্বামী গলায় ফাঁশ আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যাই।
তবে সালিশে মতিয়ারকে থাপ্পড় মারার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেম্বার সুজন। তিনি বলেন, অনেক লোক ছিল সেখানে। কয়েকজন মিলে পারভীনকে পাশেই তার বাবার বাড়িতে রেখে এসেছি।
মতিয়ারের আত্নহত্যার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। লাশ উদ্ধার করে পুলিশ তা ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছেন। এনিয়ে থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন মতিয়ারের স্বজনরা। কেউ দোষী হলে তার শাস্তি হোক, সেটা চাই।
সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম বলেন, খবর পেয়ে ভোরেই পুলিশ সেখানে গিয়ে গাছের মগডাল থেকে সতর্কতার সাথে লাশ নামানো হয়েছে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।