সুন্দরগঞ্জে মাঠ ভরা ধান হাসি নেই কৃষকের মুখে
নিজস্ব প্রতিবেদক-
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এখন চারদিকে ফসলের মাঠজুড়ে পাকা ধান। যে দিকেই তাকানো যায় চোখে পড়ছে সোনালি ধান। কিন্তু মাঠ ভরা ধান হাসি নেই কৃষকের মুখে। পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার কাজ শুরু করেছেন কৃষকরা। কিন্তু ধানে চিটা থাকার কারণে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক জমির ধান কাটায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কারণ ধানের ভেতরে চাল নেই, পুরোটাই চিটা। এ ধান কেটে মাড়াই করলে শ্রমিকের মজুরিও উঠবে না বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
যখন ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠবে কৃষক পরিবার। প্রতিটি কৃষকের চোখে মুখে পাকা ফসল ঘরে তোলার হাসি থাকার কথা ৷ এ যেন প্রতিটি কৃষকের এক স্বপ্ন । মূলত বৈশাখ মাসে বোরো ধানের শীষ বের হয়ে তা পরিপুষ্ট হয়। এরপর বৈশাখের শেষভাগ থেকে শুরু করে পুরো জৈষ্ঠ্য মাস জুরে চলে ধান কাটার পালা ৷ কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্নে আগুন দিয়েছে ব্লাষ্ট নামের ছত্রাক ব্লাস্টের আক্রমণে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ ক্রমেই পুড়ে যাচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হয়, মাঠের ধান পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায় তার উল্টো। ধানের পেটে চাল নেই কৃষকের মুখে হাসি নেই! শুধুই হাহাকার। কৃষকদের মতে এই রোগের নাম শীষ মরা আর কৃষি অফিসের মতে ব্লাস্ট নামের ছত্রাক। উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ইরি-বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ২৬ হাজার ৯৪৫ হেক্টর ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৫৩ হেক্টর। রোপনের কিছুদিন পরেই কিছু ক্ষেতে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ফসলগুলো পুনরায় ব্লাস্টের আক্রমণের শিকার হয়েছে। কৃষি অফিস আরো জানায়, সাধারণত ব্রি-২৮ জাতের ধানে এ রোগটি বেশি আক্রমণ করেছে। আগামীতে কৃষকদের ব্রি-৭৪, ব্রি-২৯, ব্রি-৮৯ ও ব্রি-৯২ জাত চাষ করার পরামর্শ প্রদান করেন ।
কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ বিভিন্ন ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়। এতে কৃষকের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ধানের শীষ বের হওয়ার তিন-চারদিন পরই শীষগুলো মরে যাচ্ছে। ধানের পেটে কোন চাল নেই! মনে হয় ধানগুলো পেকে গেছে। কৃষি কর্মকর্তারা পুনরায় স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোন সুফল পাচ্ছেন না বলে জানান কৃষকরা।
ধুমাইটারী গ্রামের কৃষক বাবু মিয়া বলেন, শীষ মরা রোগের আক্রমণে আমরা দিশেহারা। গ্রামের অনেকেই এখন জমির ধান কেটে বাড়িতে আনতে চাইছেন না। কারণ চিঠার পরিমাণ বেশি হওয়ায় খড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না । কৃষকদের দাবি শীষ মরা রোগে আক্রান্ত ধানের খড়ও গবাদিপশু খেতে চায় না। ওই গ্রামেরই অন্য কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমার ধানক্ষেতে তিন বার বিষ দিছি কিন্তু এই শীষ মরা রোগ ভালো হইলো না। শেষে সব ধান মইরা গেল ।
ঝিনিয়া গ্রামের কৃষক আবুল বাশার বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে দুই একটা শীষ মরা দেইখা ক্ষেতে বিষ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিদ্যুতের মোটর পাম্প দিয়ে সেচ দিয়েছি। টাকাও গেল, ধানও গেল। এখন আর কোনো আশা নাই। উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। কৃষকের চোখের সামনেই ক্ষেতের সোনার ফসলগুলো ধীরে ধীরে পুড়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য একজন কৃষকের কাছে বড়ই নির্মম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, সাধারনত স্প্রে করার পর নতুন করে এ রোগ আক্রমণ করার কথা নয়। অনেক সময় কৃষক স্প্রের ডোজ না মেনে কম পরিমাণে স্প্রে করেন। যে কারণে হয়তো ছত্রাকটি পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। আমরা উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারপরও শেষ রক্ষা হবে কি না জানি না। তিনি কৃষকদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান।