গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর প্রশ্নে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এতে পাশ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের ২২৬ পরীক্ষার্থী। ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকগণও। উপজেলার ধুমাইটারী সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার পরীক্ষা কেন্দ্রে এ দায়িত্বহীনতার তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যে জানা যায়, আলিম পরীক্ষার প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার একমাত্র আলিম পরীক্ষা কেন্দ্র ধুমাইটারী সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা। সারাদেশের ন্যায় এ কেন্দ্রেও যথারীতি সকাল ১০ টায় ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা শুরু করে। এ কেন্দ্রে উপজেলার সাত মাদ্রাসার ২৩৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অনুপস্থিত থাকে ৮ পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নেয়া বাকী ২২৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জন অনিয়মিত এবং ২১৬ নিয়মিত পরীক্ষার্থী। আলিম পরীক্ষার প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অনিয়মিত ৩ জনের পরীক্ষা ছিলো। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে ভুল করে নিয়মিত ২১৬ জনকেও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়। যথারীতি পরীক্ষাও শেষ করেন তারা। এর মধ্যে কারো নজরে আসেনি এ অনিয়মের বিষয়টি। পরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হল থেকে বের হন এবং সবার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। শেষে দেখেন সবার হাতে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র। এতে ক্ষোভ জানান পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সকলের প্রতি। সেই সঙ্গে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন পাশ নিয়ে। উৎকন্ঠায় আছেন অভিভাবকগণও।
এ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী মো. শাহিন মিয়া বলেন, ‘আজ প্রথম পরীক্ষা ছিল। আমরা প্রশ্নপত্র পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। প্রশ্নপত্রে যে অনিয়মিত লেখা ছিল তা খেয়াল করিনি। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নজরে আসলে শিক্ষকদের বলেছি। তারা দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন।
মো. আব্দুল আজিজ নামের অপর এক পরীক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা পরীক্ষার্থী তারা না হয় বিষয়টি খেয়াল করিনি, কিন্তু যারা পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তারা তো ভুল প্রশ্নপত্রে আমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। তাদের খেয়াল করা উচিত ছিলো।
মো. জুলফিকার রহমান নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, আজ প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। যেগুলো পড়ে গেছি সেগুলো পরীক্ষা আসেনি। এতে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র দেখলাম অনিয়মিতদের প্রশ্নপত্র। এটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, ভুল প্রশ্নে বাচ্চাদের পরীক্ষা নেওয়ায় আমরা টেনশনে আছি। পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট আসবে কিনা। এর দায় কোনভাবে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এড়াতে পারবেন না। আমরা এর সুষ্ঠু পদক্ষেপ কামনা করছি।
কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, পরীক্ষা শুরুর আগে ‘খ’ সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন অসাবধানতাবশত অনিয়মিত (ইরেগুলার) শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নজরে আসলে বোর্ডে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত কেন্দ্র সচিব ও মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কেওয়াইএম আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমার এই কেন্দ্রে অনিয়মিত ১০ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৪০০ প্রশ্নপত্র এসেছে। আমাদের নজর কাঠিয়ে নিয়মিত প্রশ্নের পরিবর্তে অনিয়মিত প্রশ্ন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে। পরিক্ষা শেষে বিষয়টি আমার চোঁখে পরেছে। আমি তাতক্ষণিক সময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে বিষয়টি অবগত করি।
কেন্দ্রের নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ লস্কর বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কেউ বিষয়টি আমাকে জানায়নি। যদি ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে থাকে এ দায় আমার নয়। এর দায়-দায়িত্ব কেন্দ্র সচিবের।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মমিন মণ্ডল বলেন, ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় নেয়া ঠিক করেননি। বোর্ড চাইলে এই প্রশ্নপত্রের আলোকে খাতা দেখার নির্দেশ দিতে পারে। তখন পরীক্ষার্থীদের ফলাফল আসবে হয়তবা।
এব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-নূর-এ আলম বলেন, ‘অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া উচিত হয়নি। এর পুরো দায় কেন্দ্র সচিবের উপর বর্তায়। কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে এখনো দেখা হয়নি। ওনাকে ডেকেছি, উনি আসলে বিস্তারিত জানতে পারবো।
এবিষয়ে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ বলেন,বিষয়টি অনিয়ম। এর দায় কেন্দ্র সচিবের। ইউএনও’কে আমি বলেছি। পুরো বিষয় জেনে আমাকে বিস্তারিত জানাতে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি প্রমানিত হলে কেন্দ্র সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।