লেখক: রাফিয়া চেতনা
বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের একটি বিশাল অংশ থ্রিলার জনরার সাথে পরিচিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ এবং মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখার মাধ্যমে।পরবর্তী সময়ে মো.নাজিমউদ্দীনের রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি, নেমেসিস, কন্ট্রাক্ট ইত্যাদি বইয়ের মাধ্যমে থ্রিলার জনরায় একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। পাঠকের চাহিদা বাড়ায় অনেক লেখকই থ্রিলার লিখতে শুরু করেন।বর্তমানের সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনও রেজা সিরিজ নামে একটি থ্রিলার সিরিজ বই প্রকাশ করেন।এই সিরিজের তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এই তালিকায় আরও আছে বাংলা সাহিত্যে মেডিকেল থ্রিলার লেখা ডা. মালিহা তাবাসসুম। পাঠক তার নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বইয়ের শেষাংশ পাবে এমিন ভিন্নধর্মী বই লেখা অন্তিক মাহমুদ। আবার সুইসাইড নোট বইয়ের লেখক শহীদুল ইসলাম রাজনও থ্রিলার জনরায় উল্লেখযোগ্য একজন লেখক হয়ে উঠেছেন। লামিয়া হান্নান স্নেহা,রুমানা বৈশাখীর হরর বইগুলোও উপেক্ষা করার উপায় নেই।এসব ক্রাইম,গোয়েন্দা, হরর ইত্যাদি সব শাখার ভীড়ে থ্রিলারের যে বিশাল শাখাটি বাংলা সাহিত্যে একপ্রকার অনুপস্থিত তা হলো সুপারহিরো অথবা অতিমানব কেন্দ্রিক মুল চরিত্রের গল্প।
অথচ বর্তমান সময় কে হলিউডের সিনেমা বোদ্ধা রা বলেন “এন এরা অফ সুপারহিরো” অর্থাৎ সুপারহিরোদের যুগ৷ হলিউডে মারভেল এবং ডিসি কমিকস এর সুপারহিরোদের সম্পর্কে কে না জানে! তাদের কমিকস, সিনেমা,এনিমেশন, ওয়েব সিরিজ সবকিছুই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।মারভেল-ডিসির বাইরেও অনেক জনপ্রিয় সুপারহিরো ক্যারেক্টার আছে হলিউডে। ইংরেজি সাহিত্যও এই জনরায় ভরপুর। পিছিয়ে নেই বিশ্বের আরো এক অন্যতম মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি বলিউড।ক্রিশ,চিট্টি,জি-ওয়ান,ফ্লায়িং জাট, মৃন্নাল মুরালি,মুগামদি ইত্যাদি নানারকমের সুপারহিরোর সাথে পরিচয় করিয়েছে তারা।জনপ্রিয়তার বিচারেও পিছিয়ে নেই এসব হিরোরা।
তবে দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের সাহিত্য কিংবা সিনেমা দুটোই এই দিকে ভীষণ পিছিয়ে। মেশিনম্যান,রবোকপ,কিংবা ঢালিউডের সুপারম্যান এসব এখনকার সময়ের তুলনায় ভীষণ বেমানান এবং হাস্যকর। বাংলাদেশে সুপারহিরো ক্যারেক্টার বলতে উল্লেখযোগ্য একমাত্র বিজলি। এই খড়া কাটাতে নিরলস ভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন লেখক মোহাম্মদ রাগিব নিজাম। তিনি গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের অতিমানব নামক একটি ইউনিভার্স।এই ইউনিভার্স এর ক্যারেক্টারদের নিয়ে প্রকাশ করেছেন বই। শুরু করেছেন বাংলা সাহিত্যে প্রথম সুপারহিরো বিষয়ক ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিনটির নামও দিয়েছেন সুপারহিরো। রাগিব নিজামের সম্পাদনায় এবং শাহরিয়ার ইমতিয়াজ অভির প্রকাশনায় ষান্মাসিক এই ম্যাগাজিনটি দুই বাংলার লেখকদের সুপারহিরো গল্পগুলো নিয়ে দু’টি সংখ্যা প্রকাশ করেছে।প্রথম সংখ্যাটি ই-ম্যাগ আকারে প্রকাশিত হয়।দ্বিতীয় সংখ্যাটিতে এই অসাধারণ উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়ে এতে গল্প দেন বাৎসরিক সাময়িকী কালিহাতীর সাহিত্যাঙ্গন এর সম্পাদক আসিফ খন্দকার। তিনি নিজেও বিখ্যাত ফিকশন সুপারহিরোদের ভক্ত। মেকা কুংফু মাস্টার নামে তার সম্পূর্ণ মৌলিক একটি গল্প ম্যাগাজিনটির দ্বিতীয় সংখ্যা কে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।তারই উদ্যোগে দ্বিতীয় সংখ্যাটি ই-ম্যাগের পাশাপাশি কিছু পরীক্ষামূলক প্রিন্ট কপি করা হয়।তৃতীয় সংখ্যা থেকে আসিফ খন্দকার সহ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তৃতীয় সংখ্যা এবছর নভেম্বরে প্রকাশিতব্য এবং এবারের সংখ্যাটি প্রিন্ট ম্যাগাজিন আকারেই প্রকাশিত হবে। এবারে থাকবে আরও নতুন কিছু লেখকের গল্প।তৃতীয় সংখ্যার প্রচ্ছদ করেছেন ফারিহা আহমেদ। ম্যাগাজিনের ভেতরে গল্পের সাথে সুপারহিরো ক্যারেক্টারগুলির ছবিও আঁকা থাকবে।
বাংলা সাহিত্যে এই সুপারহিরোদের সম্পর্কে রাগিব নিজাম বলেন, ” আমাদের দেশ দ্রুত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে।আমাদের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি তে এখন বিশ্বমানের সিনেমা,ওয়েব সিরিজ বানানো হচ্ছে।ওটিটি প্লাটফর্ম অনেক পথ খুলে দিয়েছে নিজেদের প্রকাশ করার।হলিউডের সাথে যৌথভাবে নির্মিত হচ্ছে মাসুদ রানার উপর সিনেমা। আমি আশাবাদী কোনো প্রযোজক সুপারহিরোর উপরেও কাজ করবেন।তখন যেন আমাদের নিজস্ব সুপারহিরো গল্পের কমতি না হয় এই উদ্দেশ্যেই ম্যাগাজিন টি শুরু করা। এছাড়া পাঠকদেরও চাহিদা বাড়ছে নিজের দেশের সুপারহিরো ক্যারেক্টারের প্রতি।”
থ্রিলারের অন্যতম শাখা সুপারহিরো বাংলা সাহিত্যে প্রসার লাভ করুক,এবং বিশ্বের সামনে উপস্থাপিত হোক এমনটাই প্রত্যাশা পাঠকদের।