প্রবঞ্চনা ভোক্তার সঙ্গে কারসাজিতে দাম বৃদ্ধি, প্রবঞ্চনা ভোক্তার সঙ্গে কমানোর নামে ভাঁওতাবাজি সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেঁধে দিলেও বাজারে সেই দর কার্যকর হয়নি । এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বাড়ালে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে মূল্য বেড়েছে । আর দাম কমালে ব্যবসায়ীরা কমায়নি ।
তখন ডলার ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি দাম আদায় করা হয়েছে । পাশাপাশি রোজা ঘিরে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও অসাধুরা কারসাজি করে দুই মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়েছে । মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তার জন্য দেওয়া ছাড় ক্রেতার কাছে পৌঁছে না বললেই চলে । সুবিধার বড় অংশই চলে যায় ব্যবসায়ী ও কথিত সিন্ডিকেটের পকেটে । সরকারের প্রশাসন- যন্ত্র দিয়ে এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না । ফলে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত । এবার রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ, দেশে ডলারের সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি- এসব কারণে রোজা উপলক্ষ্যে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেল, চিনিসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় ।
কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয় । এরপরও ওইসব ছাড়ের সুবিধা ভোক্তা পাচ্ছে না । একই সঙ্গে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে পণ্য মিলছে না । বেশি দামে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. এমকে মুজেরি বলেন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আগে থেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে । সরকার কী করছে, তা ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে । অনিয়ম করলে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে । তাহলেই ভোক্তা সরকারের উদ্যোগের সুফল পাবে । কিছু ব্যক্তি- গোষ্ঠীর হাতেই নিত্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণ
। এরা কারসাজি করলে তখন সরকারের আর করার কিছু থাকে না । জানা যায়, এবারের রোজা উপলক্ষ্যে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে আমদানির ক্ষেত্রে চিনি ও সয়াবিনের শুল্কছাড় দেওয়া হয় । এতে বাজারে প্রতি কেজিতে চিনির দাম ৫ টাকা এবং ভোজ্য তেল প্রতি লিটারে ৭ টাকা কমার কথা । বাস্তবে তা কমেনি । আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০২ থেকে ১০৩ টাকা করে ডলারের জোগান দিয়েছে । বাজারে এসব ডলার কিনতে ব্যয় করতে হয় ১২০ টাকা ।
এত কম দামে ডলার পেয়েও পণ্যের দাম কমানো হয়নি । গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাহাজ ভাড়া যেভাবে বেড়েছিল, তা গত নভেম্বরে প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায় । এর প্রভাবও বাজারে পড়েনি । এসব পদক্ষেপের ফলে পণ্যের আমদানি খরচ কমেছে কিন্তু সেই অনুপাতে দাম কমেনি । উলটো আরও বেড়েছে । আইএমএফ- এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহাজ ভাড়া কমার কারণে মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ১ শতাংশ কমছে । কিন্তু দেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই । জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের( ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েক বছর রোজায় পণ্যের দাম বাড়ছে না । কিন্তু রমজান ঘিরে রোজা শুরু হওয়ার দুই মাস আগেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে । তবে দেখা যাচ্ছে, ক্রেতার চাহিদা কমায় রোজার প্রথম সপ্তাহে কিছু পণ্যের দাম কমছে । আর সেটা সংশ্লিষ্টরা এর ক্রেডিট নিয়ে বলছে, তদারকি জোরদার করায় পণ্যের দাম কমেছে । কিন্তু পণ্যের দাম কিছুটা কমলেও ক্রেতাকে বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে
এটা একধরনের ভাঁওতাবাজি । এখান থেকে ক্রেতাকে মুক্ত করা দরকার । বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বাড়ানো হলে বা আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে মূল্য বেড়ে যায় । কিন্তু কমানোর ক্ষেত্রে এটি কমে না । বলা হয়, কম দামের পণ্য দেশে এলে কমবে । কিন্তু দেশে কমলেও যে হারে কমার কথা, সে হারে কমে না । এ বিষয়টি তদারকি করে ভোক্তার অধিকার রক্ষার পদক্ষেপও সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় না । গত সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম কমে যায়, তখন ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমায়নি ।