সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
জনবল সংকট ও সাব স্টেশন বন্ধ থাকায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। বন্ধ রয়েছে। এতে করে মানসম্মত সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে অফিসটি। স্বেচ্ছাসেবি এবং প্রকল্প কর্মীদের মাধ্যমে সুবিধাভোগিদের সেবাদান চলছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে ১১ জনের বিপরীতে জনবল রয়েছে মাত্র চারজন। সে কারনে উপজেলার বামনডাঙ্গা ও ধর্মপুর সাবস্টেশন দু’টিতে সেবা প্রদান বন্ধ রয়েছে। একজন উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার, একজন ভেটেরিনারি সার্জন, একজন এসএএলও (সম্প্রসারণ) ও একজন অফিস সহায়ক দিয়ে চলছে অফিসটির কার্যক্রম।
জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও এক পৌর এলাকায় গরুর খামার রয়েছে ৮০০টি, ছাগল ২৮০টি, ভেড়া ১৭৫টি, হাঁস ২৭০টি এবং মুরগি ৪৫০টি। এছাড়া ৯৫ ভাগ কৃষকের বাড়িতে রয়েছে গৃহপালিত পশুপাখি। বিশেষ করে ৬টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে মিনি গরু ও ছাগলের খামার।
উপজেলার খামারি গ্রাম নামে পরিচিত রামভদ্র খানা বাড়ির শাহজান মিয়া বলেন, এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে মুরগির খামার রয়েছে। বর্তমানে খাদ্য, ওষুধ ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। খামারে কমবেশি প্রতি সপ্তাহে ওষুধ দিতে হয়। সে জন্য প্রাণি সম্পদ অফিসার এবং ভেটেরিনারি ডাক্তারসহ অন্যান্যদের পরামর্শ নিতে হয়। কিন্তু উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে লোকজন কম থাকায় খামার দেখার জন্য কাউকে ডাকলে পাওয়া যায় না। ফলে স্থানীয় চিকিৎসকরাই তাদের একমাত্র ভরসা।
পৌর এলাকার কলেজ পাড়ার গরু খামারি বিদ্যুৎ চন্দ্র সরকার বলেন, দীর্ঘ ১০বছর ধরে তিনি গরু প্রতিপালন করে আসছেন। বর্তমানে তার মিনি খামারে ৪টি গরু রয়েছে। দিন দিন পশু—পাখির নতুন নতুন রোগ ব্যাধি দেখা দেয়ায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হয়। কিন্তু উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে জনবল একদম কম থাকায় পরামর্শ নিতে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। অফিসার ও ডাক্তার অফিসের কাজে বাইরে গেলে কোনদিন ফিরে আসতে হয়।
হরিপুর ডাঙ্গার চরের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চরে উপজেলার ডাক্তারদের ডাকলে পাওয়া যায় না। তারা বলেন অফিসে এসে পরামর্শ নিয়ে যান। আমাদের লোকজন কম, সে জন্য বাইরে যাওয়ার সময় নাই।
বেলকা বাজারের পল্লী চিকিৎসক ওয়াহেদ সরকার জানান, তিনি ৪০ বছর ধরে পশু—পাখির চিকিৎসা করে আসছেন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে পশু—পাখির বেশিভাগ কবিরাজি চিকিৎসার মাধ্যমে করা হত। এখন খামারি এবং কৃষকরা ওষুধ ছাড়া কিছু বোঝে না। কোম্পানির ওষুধ সম্পর্কে ধারনা না নিয়ে চিকিৎসা দেয়া ঠিক না। সে জন্য প্রশিক্ষত ডাক্তারের প্রযোজন। কিন্তু খামারের তুলনায় উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারের সংখ্যা নেই বললেই চলে।
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার মোজাম্মেল হক বলেন, মাত্র চারজন জনবল দিয়ে চলছে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। প্রতিদিন অসংখ্য পশু—পাখির চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। অনেক সময় অফিসিয়াল কাজে এবং খামার দেখতে বাইরে গেলে হাসপাতালে আসা রোগিদের অপেক্ষা করতে হয়। জনবল বৃদ্ধি পেলে এ সমস্যা কেটে যাবে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডাক্তার বিল্পব কুমার দে বলেন, তিনি সবে মাত্র এই উপজেলায় যোগদান করেছেন। এটি একটি বড় উপজেলা এবং খামারের সংখ্যা অনেক বেশি। সে তুলনায় জনবল অত্যন্ত কম। সুবিধাভোগিদের শতভাগ সেবা প্রদানে জনবল একান্ত প্রয়োজন। জনবল বৃদ্ধির জন্য চাহিদাপত্র বেশ কয়েকবার পাঠানো হলেও আজও তা পুরণ হয়নি।